মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

মুখবন্ধ


ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া ভাব আদানপ্রদান-এর যে-কটা মাধ্যম এবং পদ্ধতি আছে তার মধ্যে বাক্যালাপ বা কথোপকথন, সংবাদপত্র বা বই, বেতার বা রেডিও, দুরদর্শন বা টেলিভশন এবং অধুনা ইন্টারনেট বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

মানুষ যতগুলো উপায়ে ভাব আদান প্রদান করতে জানে তারমধ্যে লিখিত ভাষা সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে । কারণ আমরা যখন পড়ি তখন পূর্ণ মনোনিবেশ করি  এবং চারপাশের প্রভাবক গুলি আমাদের র্স্পশ করতে সাহস করে না। কিন্ত টিভি দেখা বা রেডিও শোনাতে সেই সু্যোগ বেশি। চারপাশের বিক্ষেপগুলি সহজেই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে পড়ে।

তাই বলে আহ্লাদিত হবার কারণ নেই কেননা লিখিত ভাষার সেটা একটা দূর্বলতাও বটে। যদি না জ্ঞান চক্ষু উন্মিলিত থাকে লিখিত বক্তব্যের বিচার না করেই  আমরা দ্রুত প্রভাবিত হয়ে পড়তে পারি। মর্মর্স্পশী কবিতা বা গল্প ঊপন্যাস পড়ে তাই চট করে চোখে জল এসে যায় বা কৌতুকরচনা পড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। বলাবাহুল্য সে আবেগ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসৃষ্ট আবেগ অপেক্ষা  অনেক বেশি শক্তিশালী। অর্থাৎ  লিখিত ভাষা যেমন শিক্ষিত মানুষের মনে চিন্তার আলোড়ন তুলতে পারে তেমনি অসৎ উদ্দেশ্যে লিখিত রচনা অল্পশিক্ষিতজনকে সহজেই বিপথে চালিত করতে পারে। ইতিহাস তার সাক্ষী।

উপোরোক্ত তিন মাধ্যমের আর একটি সাধারন খামতি উল্লেখএর দাবি রাখে। কোনোটিতেই কিন্তু গ্রহীতা- দর্শক, শ্রোতা বা পড়ুয়া সরাসরি লেখক বা অনুষ্ঠান পরিচালনাকারীর সঙ্গে বাক্যালাপ করতে অক্ষম। এক কথায় বলতে গেলে তিন মাধ্যমই কিন্তু কম বেশি স্বৈরাচারী। পড়ুয়া, দর্শক বা শ্রোতাকে  যুক্তিবাণ হানার সুযোগ দেয় না। সক্রেটিস তাই বোধ হয় বই লেখার আগ্রহ অনুভব করেননি।

তাই কথোপকথনের কোনো বিকল্প ভাবআদানপ্রদান পদ্ধতি নেই। সেখানে যুক্তি বিনা বক্তা শ্রোতাকে প্রভাবিত করতে পারে না।  শ্রোতা যদিও বা বক্তার ব্ক্তব্যকে মেনে নেন, মেনে নেওয়ার আগে তা নিজস্ব যুক্তির কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে দেখে নেন। তাই একে প্রভাব বলা একেবারেই যুক্তিসংগত নয়।
ইন্টারনেট এখানে ভিন্ন চরিত্রে মাধ্যম। একদিকে এ যেমন এক বিশাল তথ্যের আধার অন্য দিকে যুক্তি-তর্কের আদান প্রদান করার অভ্যেসটি এখানে বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত। ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী ইচ্ছা করলেই ভাব আদানপ্রদানে অংশ নিতে পারেন। ব্লগ, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক,ইমেইল এসবেরই নমুনা। তার্কিকদের কাছে বাপ্যারটি বেশ আকর্ষনীয়। চরিত্রের দিক দিয়ে এ অনেকটা কথোপকথন এবং পঠনের মাঝামাঝি।